প্রতি বছর ১লা মে তারিখে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা সচরাচর মে দিবস নামে অভিহিত। প্রতি বছর ১লা মে তারিখে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠন সমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।
২০০৬ সালে সুয়েডীয় বাম পার্টি মে দিবস স্টকহো্মে প্রদর্শক করছে।
ইতিহাস
১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আটঘন্টার কাজের দাবীতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলীবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। ১৮৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক-এর প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এরপরপরই ১৮৯৪ সালের মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবী আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহবান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না খাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে’র ১ তারিখে “বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার” সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে পালনের দাবী জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকরী হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট এবং কিছু কট্টর সংগঠন তাদের দাবী জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসাবে বেছে নেয়। কোন কোন স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়ে থাকে। পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চীন, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সে সব দেশে এমনকি এ উপলক্ষে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ সালে।
আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোগতা। হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যে-কোন আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
আফ্রিকা মহাদেশ
আলজেরিয়া
আলজেরিয়ায় ১লা মে জাতীয় শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৬২ সাল থেকে ১লা মে বৈতনিক ছুটির দিন হিসেবে উদযাপন হয়ে আসছে।
আমেরিকা মহাদেশ
আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনায় মে দিবসে সাধারণ ছুটি থাকে এবং সরকারিভাবে উদযাপন করা হয়। প্রধান শহরগুলোতে রাস্তায় শ্রমিক শোভাযাত্রার আয়জন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ১৮৯০ সালে আর্জেন্টিনায় প্রথম শ্রমিক দিবস পালন করা হয়, একই সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন প্রথমবারের মতো উদযাপন করে।১৯৩০ সালে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বলিভিয়া
বলিভিয়ায় ১লা মে’কে শ্রমিক দিবস এবং সাধারণ ছুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায় সকল শ্রমিক এই দিনটিকে সম্মান করে।
ব্রাজিল
ব্রাজিলে শ্রমিক দিবস সাধারণ ছুটি হিসাবে পালিত হয়। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো দিনব্যাপী আলোচনা-অনুষ্ঠানের আয়জন করে থাকে। এইদিন ঐতিহ্যগতভাবে অধিকাংশ পেশাদার বিভাগের ন্যুনতম বেতনকাঠামো পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
কানাডা
কানাডায় সেপ্টেম্বর মাসে পালন করা হয়। ১৮৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রী জন স্পারও ডেভিড থমসনসেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার কানাডার সরকারী শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রেও একই দিনে শ্রমিক দিবস পালন করা হয়।
(সংগৃহীত)
0 Comments