মনসুকা ও পাশ্ববর্তী গ্রাম সমূহ কৃষি প্রধান এলাকা । অধিবাসীরা কৃষিজীবী । পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝুমি নদীর (দ্বারকেশ্বর নদের শাখা ) বন্যা এলাকার মানুষের দুর্গতির একশেষ করলেও পাট, আলু, সরষে, আমন আর বোরো মরসুমের ধানে এলাকার চলে যায় । তাই শিক্ষাদীক্ষার প্রতি মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল না । ছেলে বড় হয়ে বাবার চাষের কাজে সহায়তা করবে এই ছিল এখানকার মানুষের আশা । তাই পাঠশালায় কোন রকমে সামান্য কিছু শিখে নিতে পারলেই চলে যেত । ফলে এই এলাকায় স্কুল - শিক্ষার আলো প্রবেশ করতে পারেনি । বরকতিপুর বোর্ড প্রাইমারী স্কুলই ছিল এখানকার শিক্ষাকেন্দ্র । গ্রামের কোথাও কোথাও ব্যাক্তিগত উদ্যোগে চালিত পাঠশালাই শিক্ষার দ্বীপশিখা জ্বালিয়ে রেখেছিল । পাঠশালা বসানোর সমস্যাও ছিল । শিক্ষক পাওয়া যেত না । গ্রামের অধিকাংশ ছেলেই পাঠশালার শিক্ষা লাভ করে চাষের কাজে যেত । যারা বরকতিপুর বোর্ড প্রাইমারী স্কুল থেকে পাশ করে আসত তারাই ছিল এলাকার শিক্ষিত ব্যক্তি । যারা ম্যাট্রিক পড়তে চাইত তাদের যেতে হত ৫ মাইল দূরবর্তী বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয় অথবা শ্যামচকের বেনাবন পেরিয়ে ইড়পালা। যারা ইড়পালা বা বীরসিংহে পড়তে যেত, তাদের অনেকেই দু'এক বছর পড়াশুনা চালিয়ে ছেড়ে চলে আসত বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করতে । শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর এলাকার মানুষ চাষবাস করে দিন গুজরান করলেই যথেষ্ট মনে করত । কিন্তু কখনও চিঠি লেখা বা নোটিশ পড়ার জন্য যখন শিক্ষিত লোক খুঁজে পাওয়া যেত না বা দূরে যেতে হত তখন তারা তাদের দুর্বলতা বুঝতে পারতো । যাঁদের মধ্যে শিক্ষার আলো কিছুটা প্রবেশ করেছিল তাঁরা মনসুকা গ্রামে একটা স্কুল খোলা যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা ও আলোচনা করতেন । কিন্তু শিক্ষক সমস্যা, ছাত্র সমস্যার জন্য কার্যকরী কিছু করা যায়নি ।
১৯৩২ সালে শ্রীযুত মহেন্দ্রনাথ পাড়ই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে আছেন । একদিন ঈশ্বর যোগেন্দ্রনাথ বাগের ( কাপড় ) দোকানে ঈশ্বর যোগেন্দ্রনাথ বাগ, ঈশ্বর কৃষ্ণদাস মন্ডল, শীযুত মহেন্দ্রনাথ পাড়ই বিদ্যালয় খোলার বিষয় আলোচনা করে দেশের কর্তা স্বনামধন্য স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র সামন্ত মহাশয়কে গ্রামে একটি বিদ্যালয় খোলার আবেদন জানালেন । কিন্তু এই গ্রামে শিক্ষক ও ছাত্র যোগাড় করে বিদ্যালয় চালানো এক বিরাট সমস্যা একথা বলে তিনি বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিলেন না । শীযুত মহেন্দ্রনাথ পাড়ই, যোগেন্দ্রবাবু ও কৃষ্ণবাবুর উদ্দেশ্য শুনে সানন্দে স্কুল খুলতে রাজি হয়ে গেলেন । ছাত্র জুটল মাত্রা ছয় জন বরকতিপুর স্কুলেরই উচ্চতর শ্রেণির ছাত্র । মহেন্দবাবু তাদের নিয়েই বিদ্যালয়ের সূচনা করলেন গ্রামের শিব মন্দিরের দুয়ারে । শ্রীরাধানাথ সামন্ত, ঈশ্বর কিশোরীমোহন বেরা, ঈশ্বর রাধানাথ মন্ডল, ঈশ্বর তারকচন্দ্র জানা ও ঈশ্বর কালিপদ মাইতি এরাই হলেন বিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র । ছাত্র সংখ্যা বাড়তে লাগলো। শিক্ষকতায় এগিয়ে এলেন প্রসাদচক নিবাসী ঈশ্বর তপস্বীচরন পোড়ে । ইনি কৃষ্ণবাবুর বৈঠকখানায় সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে চিকিৎসা করতেন । সুচিকিৎসক ছিলেন, শিক্ষকতায়ও ছিলেন অসাধারন দক্ষতা । ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৃষ্ণবাবুর বৈঠকখানায় অধ্যাপনার কাজ চলতে লাগল । নতুন বিদ্যালয়ের ছয় জন ছাত্রই নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করায় ছাত্র সংখ্যা বেড়ে গেল । বিদ্যালয়ে যোগ দেন বনহরি সিংহপুর নিবাসী ঈশ্বর লক্ষ্মীনারায়ণ গুছাইত । স্কুল ঘর না করলে আর উপায় নাই । ঈশ্বর বাবু তখন দেশ ডাকের ব্যবস্থা করলেন । ধর্মের ডাঙায় ঘেঁটুবন আর বেলবন কেটে গ্রামের মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় তিন কামরা ঘর তৈরী হল । ঈশ্বর কালিপদ বাগ মহাশয় বিদ্যালয়ের নাম দিলেন "National বা ন্যাসন্যাল স্কুল"। পরিচালক মন্ডলী গঠন করা হল ঈশ্বর শ্রীবাস হাজরা, কৃষ্ণদাস মন্ডল, যোগেন্দ্রনাথ বাগ, রজনীকান্ত পোড়ে, অভয় চরন কর, গোবর্ধন আদক, গোবর্ধন সামন্ত প্রমুখ দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে । ঈশ্বর বাবুকে সম্পাদক করা হল । গ্রামের লোকের উৎসাহ ধরে না । তারা স্কুল করছে । এই সময়ে বরকতিপুর স্কুলের ছাত্র সংখ্যা একেবারেই কমে গেল । সেই সময়ে ছাত্রদত্ত বেতন আর পঞ্চমীর চাঁদাই ছিল শিক্ষক মহাশয়ের বেতন । ছাত্র বেশি হলে শিক্ষক মহাশয়ের পুষিয়ে যেত । বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা কমে যাওয়া বিদ্যালয়ের পক্ষে অশুভ । ভাল কাজে শত্রুর অভাব হয় না । ১৯৩৪ সালে হঠাৎই একদিন মহকুমাশাসক রেবতী রমণ দত্ত তার পুলিশ বাহিনী নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির । 'ন্যাসন্যাল স্কুল' এই নামটা তাঁর আদৌ পছন্দ নয় । বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেন । খাতাপত্র দেখলেন । মহেন্দবাবু, তপস্বী বাবু, লক্ষ্মী বাবু ও বিদ্যালয়ের সম্পাদক মহাশয়ের বাড়ি সার্চ করা হল । মহেন্দবাবুর বাড়িতে M.N. Roy এর একটা চিঠি আর তপস্বী বাবুর বাড়িতে নিষিদ্ধ বই শরৎচন্দ্রের লেখা " পথের দাবী " ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেল না । মহকুমাশাসক মহাশয় বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে গেলেন । বলে গেলেন, ' সরকারী অনুমতি ছাড়া বিদ্যালয় খুললে শিক্ষক ও পরিচালক মন্ডলীর সদস্যদের বিপ্লবী বলে গন্য করা হবে' । মহেন্দবাবু হুগলি জেলার কাকনানে পালিয়ে গেলেন । বিদ্যালয় আট মাস বন্ধ রইলো । চেষ্টা চলতে লাগল যাতে বিদ্যালয় খোলা যায় । এই সময়ে মেদিনীপুরে ইংরেজ নিধন চলছিল । পেডি, ডগ্লাস্ বার্জকে হত্যা করা হয়েছে । তাই স্কুল 'ন্যাসন্যাল স্কুল' হতে পারে না ।
ইতিমধ্যে মহকুমা শাসক বদলি হলেন । এলেন D. N. Saha । ইনি ছিলেন সদাশয় দেশপ্রেমিক ও বিদ্যোৎসাহী, তিনি বিদ্যালয়ের সম্পাদক ঈশ্বরবাবুকে জানিয়ে বিদ্যালয়ে এলেন দেখতে । গ্রামের লোকের উৎসাহ দেখে তিনি অভিভূত । পরামর্শ দিলেন, " ঐসব শিক্ষক রাখা চলবে না, পরিচালক মন্ডলী পরিবর্তন করতে হবে, স্কুলের নাম বদলাতে হবে । তাহলে বিদ্যালয় খোলার অনুমতি পাওয়া যাবে । একজন সরকারী প্রতিনিধি রাখতে হবে, পাশের গ্রাম থেকে অন্ততঃ দুজন প্রতিনিধি রাখতে হবে"। মহকুমা শাসকের উপস্থিতিতে পরিচালক মন্ডলী গঠন করা হল । দীর্ঘগ্রামের সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরী, লক্ষ্মীনারায়ণ রায়, নদের চাঁদ বেরা, ঈশ্বরচন্দ্র সামন্ত, সার্কেল অফিসার ( সরকারি প্রতিনিধি ) নিয়ে পরিচালক মন্ডলী গঠন করা হল । গ্রামবাসীগণের একান্ত জিদে বিদ্যালয়ের নাম করন করা হল " মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় "। ঈশ্বর বাবুর অবশ্য আপত্তি ছিল । কিন্তু দেশবাসীর সমবেত ইচ্ছাকে তিনি সেদিন উপেক্ষা করতে পারেন নি । শিক্ষক হলেন :- বসন্ত কুমার আচার্য, নিশাপতি রায় আর বসন্ত বাবুর প্রিয় ছাত্র মাধবচক নিবাসী কানাইলাল দোলই । বিদ্যালয় মঞ্জুরী পেয়ে গেল ১৯৩৫ সাল থেকেই।
বসন্ত বাবু বিদ্যালয় ত্যাগ করায় কিশোরপুর নিবাসী শ্রদ্ধেয় শ্রীযুত রাখালচন্দ্র পাখিরা মহাশয় প্রধান শিক্ষক হয়ে এলেন । তিনি থাকতেন যোগেনবাবুর বাড়িতে । স্কুলই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান । ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন । অবসর সময়ে তাঁত বুনতেন । এমন ছাত্র দরদী শিক্ষক খুব কমই দেখা যায় । ছাত্রদের চরিত্র গঠনের দিকে তাঁর বিশেষ নজর ছিল । ১৯৩৬ সালে শ্রীযুত গুনধর সাঁতরা District Scholarship পান । তাতে গ্রামবাসী মানুষের উৎসাহ বেড়ে যায় । এখন যেখানে বিদ্যালয়ের পুরাতন বাড়ি ( অফিস ) সেখানে একটা খড়ের চাল ছিটে বেড়ার ঘর গ্রামবাসীদের সাহায্য সহযোগিতায় তৈরী করা হয় । পূর্বের দক্ষিন দুয়ারী বেড়ার ঘরে আর ছাত্রদের স্থান সঙ্কুলান হয় না । বিদ্যালয়ের সম্পাদক গ্রামের কর্তা ইশ্বর বাবু দেশ ডাক দেন । বেড়ার ঘর ফেলে দিয়ে উপর নীচে ছয়কামরা মাটির দেওয়াল দিয়ে একটি ঘর করা হয় । দেশের লোক শ্রম দান করেন । ঈশ্বর বাবুর চন্দ্রকোণার পুকুর পাড়ের তালগাছ কেটে আনান কৃষ্ণ বাবু । ঈশ্বর বাবু টিনের আচ্ছাদন করে দিলেন । বরকতিপুর নিবাসী স্বর্গীয় গুইধর সেন স্কুলের প্রয়োজনীয় টেবিল - চেয়ার - বেঞ্চ দান করলেন ।
১৯৩৯ সালে বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি খোলা হল । প্রধান শিক্ষক হয়ে এলেন খাসবাড় নিবাসী স্বর্গীয় তীর্থ কুমার প্রধান । ইনি একজন আইন ব্যবসায়ী ছিলেন । এই সময় নিশাপতি রায় বিদ্যালয় ত্যাগ করায় স্বর্গীয় রামচরন পোড়ে ও শ্রীযুত রাধানাথ সামন্ত বিদ্যালয়ে যোগ দান করেন । স্বর্গীয় কালিপদ বাগ মহাশয় প্রতিদিন দু' ঘন্টা করে শিক্ষা দান করতেন । বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন দেখাশোনার দায়ভার তিনিই নিয়েছিলেন ।
এই বৎসর থেকেই বিদ্যালয়ে কৃতী ছাত্রদের পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । ১৯৪০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে যোগ দান করেন মদনবাটী নিবাসী শ্রীযুক্ত সাধনচন্দ্র জানা মহাশয় । ইনি একজন স্বাধীনতা-সংগ্রামী, নাট্যকার ও অভিনেতা ছিলেন । তাঁর লেখা নাটক 'বাংলার দস্যু', 'দেবকী' ও 'পলাশী' বিদ্যালয়ের স্মৃতি বার্ষিকীতে অভিনীত হয় । ছাত্রদের নিয়েই ছিল তাঁর মান-অভিমান সব কিছু । কর্মজীবনে ছাত্র আর বিদ্যালয় ছাড়া আর কিছু তিনি জানতেন না । বাড়ির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন । তাঁর এবং প্রধান শিক্ষক তীর্থবাবুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ে থিয়েটার হত । বিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রদের পুরস্কার প্রদানের দিন ঠিক হয় ২০ শে বৈশাখ । ঐ দিনেই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ঈশ্বরচন্দ্র সামন্ত মহাশয়ের পিতৃদেব স্বর্গীয় লক্ষ্মীনারায়ণ সামন্ত মহাশয় পরলোকগমন করেছিলেন । প্রতি বৎসর ঐদিনে ঈশ্বর বাবু ছাত্র, শিক্ষক ও এলাকার বিশিষ্ট লোকেদের আমন্ত্রন করে খাওয়াতেন । সকালে প্রভাতফেরী, লক্ষ্মীনারায়ণ সামন্ত মহাশয়ের সমাধি মন্দিরে মাল্যদান ও জলযোগ, বিদ্যালয়ে কানাইবাবুর পরিচালনায় নানাপ্রকার খেলাধূলা ও ড্রিল, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা পুরস্কার প্রদান । দুপুরে সামন্ত বাড়িতে ভুরিভোজ । সন্ধ্যায় থিয়েটার । এই অনুষ্ঠানই স্মৃতিবার্ষিকী অনুষ্ঠান ।
১৯৪৩ সালের বৃত্তি পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে স্বর্গীয় ভূপাল চন্দ্র কর ও শ্রী গুণধর কুঁতি বৃত্তি লাভ করেন । ভূপাল বাবু আবার জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন । তার ফলে গ্রামবাসী মানুষের উৎসাহ বেড়ে গেল । উচ্চ বিদ্যালয় করতেই হবে । যোগেনবাবু ও কৃষ্ণবাবু, ঈশ্বর বাবুকে ধরে বসলেন দেশ ডাকার জন্য । হাইস্কুল করতে গেলে চাই অনেক টাকা, তা যোগাড় করতে হবে, কিন্তু শিক্ষক পাওয়া বিশেষ সমস্যা । বিশেষ করে গ্রামে শিক্ষক আসতে চান না । দেশের লোক চাঁদা ও শ্রম দিয়ে, গ্রামবাসীর বাজে আদায় থেকে, ভিক্ষা করে টাকা যোগাড় করার প্রতিশ্রুতি দিলে ১৯৪৩ সাল থেকেই পঞ্চম শ্রেণি খোলা হল । মহেন্দবাবু মনসুকায় ফিরে এলেন । ১৯৪৪ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিও খোলা হল । ১৯৪৫ সালে সপ্তম শ্রেণি খোলার জন্য সুলতানপুর নিবাসী অচ্যুতানন্দ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে নিয়ে আসা হল । পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকও সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিলেন । এর পর ঐ গ্রামেরই একজন বিপ্লবী জহরলাল বক্সী ( বি. এ. ) মহাশয় বিদ্যালয়ে যোগ দান করেন । সপ্তম, অষ্টম শ্রেণি খোলার জন্য প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়ে আসা হল ময়াল নিবাসী স্বর্গীয় পার্বতীচরণ মণ্ডল ( বি.এ. বি.এল ) মহাশয়কে । ইনি ঈশ্বরবাবুর বাড়িতেই থাকতেন।
১৯৪৫ সাল থেকেই বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে অনুমোদন লাভ করে । সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শ্রীযুক্ত বুদ্ধিমন্ত বেরা ও স্বর্গীয় সুবলচন্দ্র চৌধুরী । শ্রদ্ধেয় সুবল বাবু ছিলেন জন্মগত শিক্ষক । অঙ্ক, ইংরেজি, বাংলা ও সংস্কৃতে তাঁর অসাধারন দক্ষতা ছিল । তিনি ব্যাঙ্কের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন । বিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে তাঁর অবদান অসামান্য ।
বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা কম । ছাত্রদত্ত আদায় মাসিক ১৪৬ টাকা । বছরে মাত্র তিন বার পরীক্ষার সময় আদায় । ফলে শিক্ষক মহাশয়দের বছরে প্রায় ১৮/২০ কিস্তিতে মাসের বেতন নিতে হত । আদায়ী বেতন থেকে শিক্ষক মহাশয়দের বেতন দিতে যা অভাব পড়ত ঈশ্বর বাবু নিজে তা দিয়ে দিতেন । গ্রামের উৎসব অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে বাজে আদায়ের টাকা বিদ্যালয় তহবিলে দেওয়া হত । গ্রাম কমিটিও দেশ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিছু আদায় করে দিত। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বাড়তে লাগল । বিদ্যালয়টি যাতে আরও উন্নত হয় তার জন্য চেষ্টা চলতে লাগলো । বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি খোলা হল ১৯৪৭ সালে। একজন পন্ডিতের প্রয়োজন । বরকতিপুর নিবাসী প্রয়াত হরেন্দ্রনাথ কাব্যতীর্থ বিদ্যালয়ে যোগ দিলেন । এই সময়ে বিদ্যালয়টি জুনিয়ার হাইস্কুলের অনুমোদন লাভ করে । ১৯৫২ সালে করনিক হিসেবে যোগ দেন প্রয়াত ভূপাল চন্দ্র কর । ছাত্র বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়ে গৃহের প্রয়োজন । আকাঙ্ক্ষা পাকাবাড়ি করবার । এই সময় উদয়রাজপুরে মাত্র ১০০ টাকায় একটি পুরাতন পাকাবাড়ি কিনে তার ইট খুলে আনা হল । শ্রীযুত সুধীর চন্দ্র সাঁতরা ও শ্রীযুত সতীশ চন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে গ্রামবাসীগণ ইট আনতে গেলেন । তত্ত্বাবধানে প্রয়াত কৃষ্ণদাস মন্ডল । প্রয়াত অতুলচন্দ্র দোলই মহাশয়ের নৌকায় বিনা পয়সায় ইট নিয়ে আসা হল । কৃষ্ণ বাবুর জমিতে স্কুলের ইট কাটা হল । ১৯৪৮ সালে বাড়ীর কাজ শুরু হল । তৈরী হল ছয় কামরা পাকাবাড়ি। গ্রামের মানুষ বাড়ি-বাড়ি মজুর সাহায্য দিলেন । ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে কেউ দিলেন বাঁশ, আবার কেউ বা দিলেন নগদ অর্থ । এইভাবে পাকাবাড়ির কাজ শেষ হল । এই বাড়ি করতে গিয়ে ঈশ্বরবাবুকেও বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয় । ১৯৪৮ সালে নবম শ্রেণি খোলার চেষ্টা করা হলেও কার্যকরী হয়নি । এই সময় শিক্ষক মহাশয়দের ধরে রাখাই ছিল একটা সমস্যা । হরেন্দ্রনাথ কাব্যতীর্থ মহাশয় ময়াল চলে গেলেন । তাঁর জায়গায় এলেন বীরসিংহের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক দীর্ঘগ্রাম নিবাসী প্রয়াত নলিনীকান্ত কাব্যতীর্থ । হাইস্কুল খুলতে গেলে এম. এ. পাস প্রধান শিক্ষক প্রয়োজন ।
ইড়পাল্লা গ্রামের অভিজাত রুদ্র পরিবারের সন্তান স্বগীয় সমরেশ চন্দ্র রুদ্র সরকার ( এম. এ. ) বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র সামন্ত মহাশয়ের অনুরোধে ১৯৫১ সালের ১২ ই জুলাই প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন । হাইস্কুলের ছাত্র সংখ্যা তখন মাত্র ১২০/ ২১ জন । প্রধান শিক্ষক সহ শিক্ষক মাত্র ছয় জন । ১৯৫১ সালেই স্কুলটির সরকারী অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করা হয়, কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে এবং বিদ্যালয়ের Reserve fund এ টাকা কম থাকায় বিদ্যালয় সরকারী অনুমোদন পেল না । বিদ্যালয়ে কোন ছাত্রাবাস না থাকায় বাহিরের কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসতে চাইতেন না । এই সময়ে কুঞ্জবাবু থাকলেন নদের চাঁদ বেরা মহাশয়ের বাড়িতে, আর সমরেশ বাবু খেতেন যোগেনবাবুর বাড়িতে । তাছাড়া অননুমোদিত বিদ্যালয় বলে কোন সরকারী সাহায্য পাওয়া যেত না । এই সময়ে বিদ্যালয়ের গঠনে গ্রাম কমিটিতে ছিলেন :- নদের চাঁদ বেরা, রাধাগোবিন্দ বেরা, কৃষ্ণদাস মন্ডল, রজনীকান্ত পোড়ে, বসুদেব সামন্ত, সতীশ চন্দ্র সামন্ত, মহেন্দ্রনাথ সামন্ত, যোগেন্দ্রনাথ বাগ । এঁরা বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বতোভাবে সাহায্য করতেন ।
১৯৫২ সালে উপায়ান্তর না দেখে প্রধান শিক্ষক মহাশয় তাঁর ব্যাক্তিগত প্রীতি সম্পর্কে খড়ারের শম্ভুনাথ কর্মকার ( বি.এস. সি ) ও দীর্ঘগ্রামের রাধানাথ হাজরা ( বি. এল. ) কে নিয়ে আসেন । স্কুলে খাতায় এঁদের নামটাই ছিল । বিদ্যালয় মঞ্জুরীর জন্য আবার আবেদন করা হয় । ১৯৫৩ সালের ১ লা জানুয়ারী থেকে " মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়" সরকারী অনুমোদন লাভ করে । ১৯৫৪ সালে বিদ্যালয়ে যোগ দেন বলরামপুর নিবাসী শ্রীযুক্ত মাণিকলাল মাইতি ( বি. এস. সি. ) আর বরিশালের অনন্তকুমার সেন ( বি. এ. বি. টি.) ও সদ্য পরীক্ষা দেওয়া দীর্ঘগ্রামের শ্রীযুত বিশ্বনাথ চক্রবর্তী । ১৯৫৪ সাল থেকেই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা School Final পরীক্ষায় বসতে থাকে । ১৯৫৬ সালে যোগ দেন মাণিক বাবুর পরিবর্তে গড়প্রতাপনগরের প্রদ্যোংকুমার মণ্ডল ( বি. এস. সি. ) । পরে আসেন রামগোপাল দত্ত । তিনিও চলে যান । ১৯৫৭ সালে আসেন ঐ পদেই রমেশ চন্দ্র গাঙ্গুলী । আত্মভোলা লোক, পাণ্ডিত্যের গভীরতা ছিল । প্রয়োজনে কাজের সামান্য বেতনের সঞ্চিত টাকা শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য ধার দিতেন । এরপর আসেন বীরভূমের অসীম কুমার দে সরকার (বি.এস.সি.) ।
১৯৫৮ সালের ৩ রা ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রাতঃস্মরণীয় ঈশ্বরচন্দ্র সামন্ত মহাশয় স্বর্গারোহণ করেন । এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে । এই সময়ে বিদ্যালয়ের দায়িত্বভার গ্রহন করেন স্বর্গীয় ঈশ্বরবাবুর সুযোগ্য ছোট ভাই স্বর্গীয় ভজহরি সামন্ত মহাশয় । তাঁর পরিচালনায় বিদ্যালয়ের উন্নতি অব্যাহত থাকে । উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের পৃথক কোন অনুমোদন ছিল না । স্কুল বোর্ডের সভাপতি অনঙ্গমোহন দাসকে ২০ শে বৈশাখ পুরস্কার বিতরণী সভায় আনা হয় । তাঁরই চেষ্টায় ১৯৫৪ সাল থেকে প্রাথমিক বিভাগ আলাদা অনুমোদন লাভ করে ।
সহকারী প্রধান শিক্ষক অনন্ত বাবুর চেষ্টায় ১৯৫৩ সাল থেকেই মনসুকার কাছারী বাড়িতে ও পরে মহেন্দবাবুর বাড়িতে বোডিং চালু হয় ।
১৯৬০ সাল থেকে বিদ্যালয়ের কাজে যোগ দেন যদুপুর নিবাসী শ্রীযুত নিমাই চন্দ্র চক্রবর্তী ও মনসুকা নিবাসী শ্রীযুত মদনচন্দ্র মণ্ডল । এই বৎসর থেকেই বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষা চালু হয় । ১৯৬৪ তে যোগদান করেন শ্রীযুত পানালাল বসু, শ্রীযুত সৃষ্টিধর চংদার, শ্রীযুত অজিত কুমার ঘোষ । ১৯৬৫ সালে স্বর্গীয় সমরেশ চন্দ্র রুদ্র সরকার প্রধান শিক্ষক মহাশয় শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অবসর নেন । অত্যন্ত ছাত্রদরদী ছিলেন তিনি । পরবর্তী কালে সুযোগ পেয়েও অন্য কোথাও প্রধান শিক্ষকের পদে যোগ দেন নি । তাঁর শূন্য পদে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে আসেন রাজনগর নিবাসী প্রয়াত বঙ্কিম বিহারী সামন্ত । তিনি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আমরণ ঐপদেই ছিলেন । তাঁর সময়ে ১৯৬৭ সাল থেকে বিদ্যালয়টি উচ্চতর মাধ্যমিক ( XI Class ) স্কুল হিসাবে অনুমোদন লাভ করে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ সহ ।
বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যোগ দেন অসিতকুমার বিশ্বাস , অমিয়রঞ্জন সামন্ত, একই পদে নরেন্দ্রনাথ ভাদুড়ী, পরে শৈলেন্দ্রনাথ অধিকারী , পরেশনাথ ভুঁঞা , পরে ১৯৭২ সালে কালীপদ চক্রবর্তী । একে একে যোগ দেন জীতেন্দ্রনাথ পাল, পীযূষকান্তি ঘোষ , দিলিপকুমার বাগ , গণপতি সামন্ত, বিজয়কুমার বেরা, শম্ভুনাথ চক্রবর্তী, শিক্ষক পদে এবং তারাপদ বারিক ও শ্রীমতী দিগার চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী হিসাবে যোগ দেন ১৯৬১ থেকে। নিমাই জানা যোগ দেন ১৯৭২সাল থেকে। শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র চৌধুরী বিদ্যালয়ে যোগ দেন ১৯৭০ সালে। ঈশ্বর দুঃখীরাম দোলই গবেষণাগার সহায়ক হিসাবে যোগ দেন ।
বিদ্যালয়টি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় হয় । ঘরের সমস্যা তীব্রতর হয় । বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য টাকারও প্রয়োজন জমি জায়গারও দরকার । তাই বিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি দান করেন ঈশ্বর কৃষ্ণদাস মন্ডল, ঈশ্বর শ্রীচরণপতি মন্ডল , ঈশ্বর ক্ষুদনবালা খাঁ , মহেন্দ্রনাথ পাড়ই, কিশোর চন্দ্র মাজি , নিতাইচন্দ্র সাঁতরা , ঈশ্বর লক্ষনচন্দ্র ধাড়া । প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র সামন্ত বিদ্যালয়ের আর্থিক সমস্যা সমাধানের উপায় হিসাবে অনেক জমি বিদ্যালয়কে দান করে ছিলেন । বিদ্যালয়ের উন্নতি কল্পে অর্থ দান করেন হাওড়া নিবাসী স্বর্গীয় শ্রীরামচন্দ্র মিদ্যা , স্বর্গীয় ভজহরি পাড়ই , মনসুকা নিবাসী স্বর্গীয় বিপিন চন্দ্র সামন্ত , স্বর্গীয় তিনকড়ি বালা সামন্ত, স্বর্গীয় সত্যবালা সামন্ত। বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি কেনা হয় উক্ত দাতা ও গ্রামবাসীদের সাহায্য সহযোগিতায়। কিন্তু গৃহ সমস্যা সমাধান করা গ্রামের কৃষি নির্ভর মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সামন্ত বংশের সুযোগ্য সন্তান শ্রীযুত গোবিন্দপদ সামন্ত মহাশয়ের প্রচেষ্টায় ও কন্দর্পচক নিবাসী স্বর্গীয় মদন মোহন বেরা ও স্বর্গীয় বঙ্কিম বিহারী পোড়ে, শ্রী সতীশ চন্দ্র সামন্ত, স্বর্গীয় শচীন্দ্র নাথ খাঁ এর সহযোগিতায় হাওড়া নিবাসী ভুতোড়িয়া ব্রাদার্স এর দানে একটি আট কামরা দ্বিতল বাড়ি তৈরী হয় । ভুতোড়িয়া ব্রাদার্স এর অমূল্য দানের প্রধান মাধ্যম পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীযুত পুনমচাঁদ জৈন ( ক্যান্টিন বাবু) ও এককড়ি রায় । এই বাড়ির জন্য শ্রীযুত রাধানাথ সামন্ত তাঁর নিজের জায়গা বদল করে নিয়ে বিদ্যালয়কে দান দান করেন । হরেন্দ্রনাথ দোলই এর জায়গাটিও পাওয়া যায় । এই ভুতোড়িয়া ভবন তৈরীতে গ্রামের মানুষের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। প্রাক্তন ছাত্রগণ দিনরাত পরিশ্রম করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাঁশ সংগ্রহ, ইট বওয়া , ভিত কাটা প্রভৃতি কাজে সহযোগিতা করেন । এই ভুতোড়িয়া ভবনের উদ্বোধন হয় ১৯৭২ সালে । এই ভবন তৈরী না হলে ছাত্রদের গাছতলায় বসতে হত ।
যারা আগে ভাগে উচ্চতর মাধ্যমিক খোলার অনুমোদন পেয়েছিল , তারা Staff পেয়েছিল , কিন্তু মনসুকা স্কুল উচ্চতর মাধ্যমিকের জন্য কোন বাড়তি শিক্ষক পায়নি। এতএব শিক্ষক সমস্যা রয়েই গেল । তাই পরবর্তী কালে যখন ১০+২ উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় করার চেষ্টা হয় , তখন বিদ্যালয় গৃহ , ফিডার স্কুল ও উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে বারো ক্লাস খোলা গেল না । বিদ্যালয়টিকে আবার X Class High School এ নেমে আসতে হয়।
১৯৭৮ সাল থেকে যোগ দেন সিংহপুর নিবাসী অজিত কুমার সামন্ত , রেবতী রমণ মন্ডল, অমরেন্দ্রনাথ চৌধুরী , সৌমেন মাজী , শ্রীমতী তপতী সামন্ত, কিংকর কুমার বেরা, তাপস কুমার রায় , বিশ্বনাথ মণ্ডল , শক্তিপদ পাত্র, কাশিনাথ মণ্ডল, রবীন্দ্র নাথ বাগ, অশ্রুজিৎ মন্ডল । করণিক পদে আসেন অভিরাম দোলই ও অসিতবরণ শাল। মেট্রন পদে আসেন শ্রীমতী সান্ত্বনা পালধি।
১৯৮২ সালের ২৭শে জানুয়ারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্মযোগী বঙ্কিম বিহারী সামন্তের অকাল প্রয়াণে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয় । তাঁর মৃত্যুতে ছাত্র শিক্ষিক অভিভাবক সকলে শোকাভিভূত হন। তার কারণ , বিদ্যালয়ই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান, বিদ্যালয়ে কাজই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ। সহকারী শিক্ষকদের সাথে কোন কারণে কথা কাটাকাটি হলেও তিনি তা মনে রাখতেন না । তাঁর মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মহাশয়কে লেখা চিঠিটা প্রমান করে , তিনি বিদ্যালয়কে ও তাঁর সহকর্মীদের কত ভাল বাসতেন । স্কুলের জন্য বাড়ীর কথা তিনি একরকম ভুলেই গিয়েছিলেন ।
১৯৮২সালের ৪ ঠা ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ভার নেন বন্দর নিবাসী শ্রীযুত বনমালী ঘোড়া মহাশয় । আদর্শবাদী , সময়নিষ্ঠ ও অক্লান্তকর্মী প্রধান শিক্ষক হিসাবে তাঁর যোগ্যতা সন্দেহাতীত । বিদ্যালয়টি যাতে দ্বাদশ শ্রেণিযুক্ত উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় করা যায় তার জন্য পরিচালক মন্ডলীর সঙ্গে একযোগে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিব মন্দির প্রাঙ্গণে মাত্র ছয় জন ছাত্র নিয়ে যে বিদ্যালয়ের সূচনা হয়েছিল তা এক মহীরুপে পরিনত হয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বর্তমানে এক হাজারের বেশি । বিদ্যালয়ের Staff ৩১ জন । মনসুকা ও পাশ্ববর্তী গ্রাম গুলির সাহায্য সহযোগিতায় দিন দিন বিদ্যালয়টি উন্নতি হচ্ছে । বর্তমান পরিচালক মন্ডলী পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ৬০ হাজার টাকা অনুদান লাভ করায় বিদ্যালয়ের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ন করা হচ্ছে । আজ এই বিদ্যালয়ের জন্য ঘরে ঘরে মাধ্যমিক পাশ ছেলে মেয়ে আছে । যাঁরা প্রাণপাত পরিশ্রম করে বিদ্যালয় করে গিয়েছেন, এখন তাঁদের পরিশ্রম ফলবতী হয়েছে ।
ক্ষুদ্র পরিসরের মধ্যে একটা বড় জিনিষকে রাখতে গেলে যেমন তার সঠিক রূপ বজায় রাখা যায় না, তেমনি বিদ্যালয়ের যাঁরা প্রকৃত রূপকার তাঁদের অবদানের যথার্থ বিবরণ দেওয়া সম্ভব হয়নি । লোকশ্রুতি ও স্মৃতিমন্থন করে যেটুকু সংক্ষেপে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি, তাতে ত্রুটি থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
শ্রী বুদ্ধিমন্ত বেরা
প্রাক্তন সহ প্রধান শিক্ষক
প্রথম প্রকাশ : মনসুকা লক্ষ্মীনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়
সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপন বর্ষ - ১৯৯৫
0 Comments