মাতৃ দিবস
মা'দের প্রতি সম্মান প্রদ্শনের একটি দিন
এই নিবন্ধটি মা দিবস সম্পর্কিত। অন্য ব্যবহারের জন্য, দেখুন মা (দ্ব্যর্থতা নিরসন)।
মা দিবস বা মাতৃ দিবস হল একটি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান যা মায়ের সন্মানে এবং মাতৃত্ব, মাতৃক ঋণপত্র, এবং সমাজে মায়েদের প্রভাবের জন্য উদযাপন করা হয়। এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে উদযাপন করা হয়। এটি বাবা দিবসের অনুপূরক, যা পিতার সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান।
একটি মা দিবস কার্ড
বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এ গুলোর অনেকই প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্য, যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উত্সব যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে, অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান মাদারিং সানডে অনুষ্ঠান উদযাপন। কিন্তু, আধুনিক ছুটির দিন হল একটি আমেরিকান উদ্ভাবন যা সরাসরি সেই সব অনুষ্ঠান থেকে আসেনি।[১][২][৩] তা সত্ত্বেও, কিছু দেশসমূহে মা দিবস সেই সব পুরোনো ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে গেছে।[৪]
ছুটির দিনটি ক্রমে এত বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে যে এটির স্রষ্টা আনা জার্ভিস এটিকে একটি "হলমার্কহলিডে" অর্থাৎ যে দিনটির বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা অভিভূত করার মতো, সেই রকম একটি দিন হিসাবে বিবেচিত করেন। তিনি শেষে নিজেরই প্রবর্তিত ছুটির দিনটির নিজেই বিরোধিতা করা শুরু করেন।[৫][৬]
ইতিহাসসম্পাদনা
একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত।
প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোরপ্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল, যদিও সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত।
মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যেদীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহবিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও "প্রধান গির্জার" সম্মানে। প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতিকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মা দিবস ছাড়াও বহু দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবসপালন করা হয় ৮ই মার্চ।
জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত "মাদার্স ডে প্রক্লামেশন" বা "মা দিবসের ঘোষণাপত্র" মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।
ঘোষণাসম্পাদনা
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন মাদার'স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) এবং "মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার" আর "মা দিবস" এইসব শব্দবন্ধের বহুল প্রচার করেন।[৫][৭]
“"She was specific about the location of the apostrophe; it was to be a singular possessive, for each family to honour their mother, not a plural possessive commemorating all mothers in the world."[৫]”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস দ্বারা দিনটিকে সরকারী ছুটির দিন হিসাবে অনুমোদন করার জন্য বিল[৮][৯] পাশের সময় আইনে এই প্রচারণারই সাহায্য নেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন এবং অনান্য মার্কিন রাষ্ট্রপতিরা।<উল্লেখ্য> আমেরিকান প্রেসিডেন্সি প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্ত প্রেসিডেন্সিয়াল প্রক্লামেশনস বা রাষ্ট্রপতির ঘোষণাপত্র:
৭১ - মাদার'স ডে প্রক্লামেশন, ফ্র্যন্কলিন ডি.রুজভেল্ট, ৩রা মে, ১৯৩৪।প্রক্লামেশন ৩৫৩৫ - মাদার'স ডে, ১৯৬৩ , জন এফ.কেনেডি, ২৬শে এপ্রিল, ১৯৬৩।প্রক্লামেশন ৩৫৮৩ - মাদার'স ডে , ১৯৬৮ লিন্ডন বি.জনসন, ২৩শে এপ্রিল, ১৯৬৪।প্রক্লামেশন ৪৪৩৭ -মাদার'স ডে, ১৯৭৬, জেরাল্ড ফোর্ড, ৫ই মে, ১৯৭৬।প্রক্লামেশন ৬১৩৩ - মাদার'স ডে , ১৯৯০, জর্জ বুশ, ১০ই মে, ১৯৯০।প্রক্লামেশন ৬৫৫৯ - মাদার'স ডে, ১৯৯৩, বিল জে. ক্লিন্টন, ৭ই মে, ১৯৯৩।প্রক্লামেশন ৮২৫৩ - মাদার'স ডে, ২০০৮, জর্জ ডব্লিউ.বুশ, ৮ই মে, ২০০৮। <উল্লেখ্য>
সাধারণ ব্যবহৃত ইংরেজি ভাষাও Mother's Day (মায়ের দিন) এই একবচনান্ত সম্বন্ধ-পদটিকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত করে, যদিও Mothers' Day ও (মায়েদের দিন, বহুবচনান্ত সম্বন্ধ-পদ) যে পাওয়া যায় না তা নয়।
বিশ্বব্যাপী তারিখসমূহসম্পাদনা
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দিনে মা দিবস পালিত হয়।গুগল অনুসন্ধানের ফলাফলের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেখলে দেখা যাবে যে প্রাথমিকভাবে দুই রকমের ফল পাওয়া যায়, ক্ষুদ্রতর ফলটি মাদারিং সানডে-এর ব্রিটিশ প্রথা অনুযায়ী লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার এবং বৃহত্তর ফলটি মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার।[১০]
যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছুটির দিনটিকেই অনান্য দেশ এবং সংস্কৃতি একরূপে গ্রহণ করে সেহেতু যুক্তরাজ্যতে মাদারিং সানডে বা গ্রিসের মন্দিরে যিশুর প্রাচীনপন্থী পুজার্চনার মত মাতৃত্বের সম্মানে বিদ্যমান অনুষ্ঠানগুলির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য তারিখটিকে সেইরকমভাবে পাল্টে নেওয়া হয। ক্যাথলিক দেশগুলোতে ভার্জিন মেরি ডে বা ইসলামিওদেশগুলোতে পয়গম্বর মুহাম্মাদ-এর মেয়ের জন্মদিনের মত, কিছু দেশে সেখানকার প্রধান ধর্ম অনুযায়ী তারিখটি পাল্টে দেওয়া হয়। অন্য বহু দেশে ব্যবহৃত হয় সেই তারিখটি যেটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, যেমন বলিভিয়া যে তারিখটি ব্যবহার করে একসময় ওই তারিখে ওখানকার নারীরা একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সম্পূর্ণ তালিকার জন্য দেখুন "আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও আচারানুষ্ঠান"।
টীকা:যেসব দেশ মা দিবসের বদলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে তাদের এই ছুরি চিহ্ন দ্বারা নির্দেশিত করা আছে '†'।
আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও আচারানুষ্ঠান
বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হল একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অনান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরানিক) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়।
কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উত্সর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেইসব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মত মায়েদের কার্নেশন (গোলাপী ফুল) এবং আরো অন্য উপহার দেওয়া হত।
অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প-পরিচিত উত্সব যা মূলত প্রবাসী মানুষেরা পালন করে থাকে বা বিদেশী সংস্কৃতি হিসাবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে (U.K বা যুক্তরাজ্যে দীপাবলীপালনের মত)।
ধর্মসম্পাদনা
হিন্দু ধর্মে এটিকে বলে "মাতা তীর্থ অনুসি " বা "একপক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা" এবং হিন্দু ধর্মালম্বী দেশগুলোতে, বিশেষ করে নেপালে এটি পালিত হয়।
দেশসম্পাদনা
আফ্রিকীয় দেশসমূহসম্পাদনা
বহু আফ্রিকীয় দেশ ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন করে, যদিও আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মধ্যে মায়েদের সম্মানে এমন অনেক অনুষ্ঠান এবং উত্সব আছে যা আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ গড়ে ওঠারবহু যুগ আগে থেকেই চলে আসছে।
বলিভিয়াসম্পাদনা
বলিভিয়ায় ২৭শে মে মা দিবস পালিত হয়। অধুনা কোচাবাম্বা শহরে ১৮১২ সালের ২৭শে মে সংঘটিত করনিলার যুদ্ধের স্মৃতিস্মারক হিসবে এই দিনটিকে মা দিবসরূপে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয় ৮ই নভেম্বর, ১৯২৭ সালে। এই যুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত অনেক মহিলাকে স্পেনীয় সৈন্যবাহিনীনৃশংসভাবে হত্যা করে।
চীনসম্পাদনা
চীনের মা দিবস ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কার্নেশন সেখানে জনপ্রিয়তম উপহার এবং সবথেকে বেশি বিক্রিত ফুল[২৭]। ১৯৯৭ সালে দরিদ্র মায়েদের সাহায্য করার জন্য, বিশেষ করে পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মায়েদের কথা মানুষকে মনে করানোর জন্য, এই দিনটিকে চালু করা হয়[২৭]। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র, পিপিল'স ডেইলি'র একটি নিবন্ধে ব্যাপারটির বিষয়ে লেখা হয় যে "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও, চীনের মানুষ বিনা দ্বিধায় এই দিনটিকে গ্রহণ করেছে কারণ এটি একদমই এই দেশের রীতি মাফিক - মানে গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা"[২৭]।
সাম্প্রতিককালে মেং জি -র মা, মেং মুয়ের স্মৃতিতে মা দিবসের সরকারি অনুমোদনের সমর্থনে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য লি হাংকি প্রচার করতে শুরু করেন এবং ১০০ জন কনফুসীয় পন্ডিত ও নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপকদের নিয়ে চাইনিজ মাদারস' ফেস্টিভাল প্রমোশন সোসাইটি নামে একটি বে-সরকারী সংগঠন তৈরি করেন[২৮][২৯]। ওরা এও বলে যে পাশ্চাত্যের কার্নেসানের বদলে দেওয়া হোক লিলি ফুল যা সন্তানরা বাড়ির বাইরে গেলে, প্রাচীন কালে চীন দেশের মায়েরা রোপন করতেন।[২৯] এটি যদিও কযেকটা মাত্র শহরে একটি বে-সরকারী অনুষ্ঠান হিসাবেই পালিত হয়।
গ্রিসসম্পাদনা
গ্রীসে, যিশু কে মন্দিরে পেশ করার ইস্টার্ন অর্থডক্সফিস্ট ডের সঙ্গেই পালন করা হয় মা দিবস। যেহেতু থিওটকস ( ঈশ্বরের মাতা) যিনি এই ফিস্টের (ভোজ) বিশিষ্ট চরিত্র এবং তিনিই যিশু কে জেরুসালেমের মন্দিরে এনেছিলেন, তাই জন্য এই পরবটি মায়েদের সঙ্গে সংযুক্ত[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
ইরানসম্পাদনা
২০ জুমাদা আল-থানি, মহম্মদ-এর মেয়ে ফাতিমা-র জন্মবার্ষিকীর দিন ইরানে পালন করা হয় মা দিবস[২৫]। নারীবাদী আন্দোলনকে ইন্ধন যোগানো এবং ঐতিহ্য মাফিক আদর্শ পরিবারের মডেল তুলে ধরার জন্য ইরানীয় বিপ্লব-এরপর এটিকে এই দিনে পাল্টানো হয়[৩০][৩১]। আগে শাহ রাজত্বে এটি ইরানীয় পঞ্জিকা মতে আজার 25শে পালিত হত[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
জাপানসম্পাদনা
প্রাথমিক ভাবে শোয়া যুগ -এ রানী কজুন -এর (রাজা আকিহিতো'র মা) জন্মদিনটিকেই মা দিবস হিসাবে পালন করা হত জাপান। এখন এটি একটি জনপ্রিয় দিন। বিশেষত কার্নেশন আর গোলাপ উপহার হিসবে দেওয়া হয় এই দিন।
মেক্সিকোসম্পাদনা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে ১৯২২ সালে আলভারো ওব্রেগন সরকার মা দিবসের প্রচলন করেন এবং সেই বছরই এক্সেলসীয়র নামক সংবাদপত্রটি এই দিনটির সমর্থনে এক ব্যাপক প্রচার চালায়।[৩২] মা দিবসের সূত্র ধরে কনসারভেটিভ সরকার চেষ্টা করে পরিবারের মধ্যে মায়েদের আদর্শ ভূমিকাটিকে তুলে ধরতে কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা কে সমাজতান্ত্রিকরা সমালোচনা করে বলেন যে এর মাধ্যমে নারীর এক বাস্তব অস্বীকারকারী বাস্তব(আইরিয়াল)ধারণা তুলে ধরা হছে যেখানে নারীদের প্রয়োজন যেন শুধু প্রজনন ক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ।[৩২]
১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময়ে লাজারো কার্দেনাসসরকার মা দিবস কে একটি "দেশাত্মবোধক উত্সব" হিসবে তুলে ধরতে চেষ্টা করে। কার্দেনাস সরকার এই দিনটিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করে: জাতীয় উন্নয়নে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটিকে মনে করানো,মেক্সিকানদের মায়ের প্রতি আনুগত্য কে কাজে লাগানো, মেক্সিকান মহিলাদের নতুন নীতিবোধে শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের ওপর থেকে চার্চ (গির্জা) ও ক্যাথলিকদের প্রভাব কমিয়ে আনা।[৩৩]স্কুলের (বিদ্যালয়) ছুটিটির পৃষ্ঠপোষকতা সরকারই করে।[৩৩] যাইহোক, থিয়েটারে অভিনীত নাটকগুলো এসব সরকারি নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করে। নাটকগুলিতে ধর্মীয় অনুষঙ্গ ও বিষয় থাকতই এবং সরকারী প্রচেষ্টা সত্তেও "জাতীয় উত্সব" ক্রমেই হয়ে ওঠে "ধর্মীয় অনুষ্ঠান"।[৩৩]
রাষ্ট্রপতি মানুয়েল আভিলা কামাচো-র স্ত্রী, সলেদাদ ওরজকো গার্সিয়া, ১৯৪০ সালে মা দিবসের প্রচার শুরু করেন এবং এটিকে একটি সরকারী উত্সবে পরিনত করেন[৩৪]। এক সপ্তাহব্যাপী হয় ১৯৪২ সালেউত্সবটি এবং সেখানে ঘোষণা করা হয় যে প্রত্যেক মহিলা যারা সেলাই মেশিন বন্ধক রেখেছে তারা বিনা খরচে সেগুলো ফেরত পাবে মন্ট দা পিয়েদাদথেকে[৩৪]।
ওরজকোর প্রচারের ফলে ক্যাথলিক ন্যাশেনাল সাইনারকিস্ট ইউনিয়ন (UNS)দিনটির বিষয়ে গুরুত্তদান করতে শুরু করে [৩৫]। পার্টি অফ দ্য মেক্সিকান রেভলিউসনের (এখন PRI) সদস্যদের যেসব দোকান ছিলো সেখানে একটি নিয়ম চালু ছিল, সেটা হল মা দিবসের দিন সমাজের নিচু স্তরের মহিলারা সেই দোকানে গিয়ে বিনামূল্যে একটি উপহার তাদের পরিবারের জন্য নিয়ে আসতে পারতো। সাইনারকিস্টরা চিন্তিত ছিলেন যে এরমভাবে বস্তুবাদ আর নিচু স্তরের মানুষদের নিষ্ক্রীয়তাকেই প্রশ্রয় দেওয়া হছে যার ফলে দেশের সামাজিক সমস্যাগুলো আবার এসে পড়ছে[৩৬]। এখন আমরা ওই ছুটির দিনকে খুবিই সংরক্ষনশীল দিন হিসাবে দেখলেও, ১৯৪০ এর দশকে UNS ওই দিনটিকে সমসাময়িক আধুনিকরণ প্রচেষ্টারই একটি অঙ্গ হিসাবে দেখত[৩৭]। এই অর্থনৈতিক আধুনিকরণ ছিল মার্কিন আদর্শে অনুপ্রানীত ও সরকার এটিকে স্পনসর করত। আবার যেহেতু দিনটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে সেই জন্য বিষয়টিকে মেক্সিকান সমাজে পুঁজিবাদ ও বস্তুবাদ ঢোকানোর প্রচেষ্টা হিসাবেও দেখা হত.[৩৭]।
UNS এবং লেওন শহরের পাদ্রীবর্গ সরকারি নীতির মধ্যে মা দিবসকে ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলার, ঘরের কাজ পরিত্যাগ করে পুরুষদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলে সমাজে মহিলাদের সক্রিয় ভূমিকার বিষয় তুলে ধরার মত প্রয়াস দেখতে পায়[৩৭]। এই দিনটির মাধ্যমে ভার্জিন মেরির পুজাকেও ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলার চেষ্টা দেখতে পায় ওরা যা কিনা ওদের মতে আরো বহু ছুটির দিন কে ডি-ক্রিসচিয়ানিজ বা বি-খ্রিস্টীয়করনের বৃহত্তর চক্রান্তের অঙ্গ। ওরা এটির বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে প্রবল প্রচার চালায় এবং ধার্মিক মহিলাদের অনুরোধ করে সরকারী অনুষ্ঠানগুলোকে "ডিপেগানাইজ" করার[৩৮]। ১৯৪২ সালে সলেদাদে মা দিবসের বিশাল অনুষ্ঠানের একই সময়ে লেওন শহরে পাদ্রীরা ভার্জিন মেরির 210 তম উত্সব পালন করে একটি বড় প্যারেড বা কুঁচকাওয়াজ সহ.[৩৮]
অনেক পন্ডিত এবিষয়ে একমত যে মেক্সিকান সরকার ১৯৪০ এর দশকে মা দিবস প্রচার সহ তাদের বৈপ্লবিক কার্যাবলী পরিত্যাগ করে[৩৫]। এখন মেক্সিকোতে মা দিবস মা এবং ভার্জিন মেরি দুজনেরিই উত্সব।
নেপালসম্পাদনা
বৈশাখ(এপ্রিল) মাসে হয় "মাতা তীর্থে অনুসি " বা "একপক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা"। এই উত্সবটি পালিত হয় অমাবস্যার সময় যার জন্য এটির নাম "মাতা তীর্থে অনুসি "। "মাতা" মানে মা, "তীর্থ" মানে তীর্থযাত্রা। উত্সবটিতে মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং জীবিত মায়েদের উপহার দেওয়া ও সম্মান জানানো হয়। কাঠমান্ডু উপত্যকার পূর্বদিকে অবস্থিত মাতা তীর্থে যাওয়া এই উত্সবের একটি অঙ্গ।
এই তীর্থযাত্রাটি ঘিরে একটি কিংবদন্তি আছে। প্রাচীন কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মা দেবকী ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। তিনি বহু জায়গা ঘুরে বাড়ি ফিরতে ভীষণ দেরি করেন.ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়ের অবর্তমানে খুবিই দুঃখিত হয়ে ওঠেন। উনি তখন মা কে খুঁজতে বেরিয়ে অনেক জায়গায় খোঁজেন কিন্তু খুঁজে পান না। শেষে যখন তিনি "মাতা তীর্থ কুন্ড"- তে পৌঁছন তখন তিনি মা কে দেখতে পান পুকুরে স্নানরত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আনন্দিত হয়ে ওঠেন মা কে খুঁজে পেয়ে এবং মা কে তিনি মায়ের অবর্তমানকালীন সব দুঃখের কথা বলেন। মা দেবকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বলেন "আহা! তাহলে এই স্থানটিকে আজ থেকে প্রত্যেক সন্তানের তাদের ছেড়ে আসা মায়েদের সঙ্গে মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক"। সেই থেকে এই জায়গাটি মৃত মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত প্রাপ্তির এক দ্রষ্টব্য ও পবিত্র তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। এও কিংবদন্তি আছে যে এক পুন্যার্থী পুকুরের জলে নিজের মায়ের প্রতিকৃতি দেখে প্রায় জলে পরে মারাই যাছিলেন। এখনও সেখনে পুকুর ধারটিতে লোহার বেঁড়া দেওয়া আছে। পুজার্চনার পরে পুন্যার্থীরা সেখনে নৃত্য, গানের মাধ্যমে নিজেদের মনোরঞ্জন করে। কিংবদন্তিগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখার অবকাশ নেই যেহেতু এগুলো প্রাচীন পুঁথির অনুযায়ী লোকমুখে চলে আসা সব ঘটনা সব।
থাইল্যান্ডসম্পাদনা
থাইল্যান্ডে মা দিবস পালিত হয় থাইল্যান্ডের রানীর জন্মদিনে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রোমানিয়াসম্পাদনা
রোমানিয়া-তে দুধরনের আলাদা ছুটির দিন আছে: মা দিবস আর মহিলা দিবস।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ইউনাইটেড কিংডম এবং আয়ারল্যান্ডসম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: Mothering Sunday
ইউনাইটেড কিংডম ও আয়ারল্যান্ড-এ , ইস্টের সানডে(২৭শে মার্চ, ২০০৯)-র ঠিক তিন সপ্তাহ আগে, লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার মাদারিং সানডে পালিত হয়.খুব সম্ভবত ষোড়শ শতকের বছরে একবার নিজের মাদার চার্চ বা প্রধান গির্জায় যাওয়ার খ্রিস্টীয়রেওয়াজ থেকেই এর উত্পত্তি. এর মূল তাত্পর্য হল যে মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হবেন.অনেক ঐতিহাসিক -এর মতে যুবতী শিক্ষানবিশ-দের এবং অন্য যুবতীদের তাদের মালিকরা কাজ থেকে অব্যহতি দিত তাদের পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য[৩৯]। ধর্মনিরিপেক্ষিকরণেরফলে এখন এই দিনটি মূলত মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর দিন যদিও বহু গির্জা এটিকে এখনও সেই ঐত্তিহাসিক ভাবে দেখতেই পছন্দ করে যেখানে থাকে যিশু খ্রিস্ট -এর মা মেরি ও "মাদার চার্চ"-এর মত ঐতিহ্যবাহী রীতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
মাদারিং সানডে সর্বাগ্রে পড়তে পারে ১লা মার্চ(যে বছরগুলিতে ইস্টের পরে ২২শে মার্চ) ও তারপর পড়তে পারে ৪ঠা এপ্রিল(যখন ইস্টের ২৫শে এপ্রিলপরে)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র / কানাডাসম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: Mother's Day (North America)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মে মাসের ২ তারিখে মা দিবস পালন করে।
ভিয়েতনামসম্পাদনা
ভিয়েতনামে মা দিবসকে বলা হয় লে ভূ-লান এবং চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী সপ্তম মাসের পঞ্চদশ (পনেরো) দিনে এটি পালিত হয়। যাদের মায়েরা জীবিত তারা ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানায় আর যাদের মায়েরা পরলোক গমন করেছেন তারা প্রার্থনা করে মৃত মায়েদের আত্মার শান্তি কামনা করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বাণিজ্যিকিকরণসম্পাদনা
সরকারী মা দিবস পালনের ন' বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে পরে যে আনা জার্ভিস নিজেই এই তাত্পর্য পাল্টে যাওয়া দিনটির ঘোর বিরোধী হয়ে যান এবং নিজের সমস্ত সম্পত্তি ও জীবন দিনটির এইরকম অবমাননার প্রতিবাদে ব্যয় করেন[৫]।
মা দিবসের বানিজ্যিকরন ও দিনটিকে বানিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগানোর প্রতিবাদে আনা তার সময়ে বহু সমালোচনা করেন[৫][৬]। তিনি সমালোচনা করেন হাতে লেখা চিঠি না দিয়ে কার্ড কেনার নতুন প্রথাকে যেটিকে তিনি আলসেমি হিসাবে গন্য করতেন। ১৯৪৮ সালে আনাকে গ্রেপ্তার করা হয় মা দিবসের বানিজ্যিকরণের প্রতিবাদ করা কালীন এবং অবশেষে বলেন যে তিনি "ভাবেন যে এই দিনটির সূচনা না করলেই ভালো হত কারণ এটি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনের বাইরে..."[৬]
মা দিবস এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্যিকভাবে সবথেকে সফলতম পরব. ন্যাশেনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোশিয়েশনের মতে রেস্টুরেন্টে ডিনার করার অন্যতম জনপ্রিয় দিন হল মা দিবস। [৪০].
উদাহরণ স্বরূপ দেখা যেতে পারে যে, IBISworld, একটি বানিজ্যিক পত্রিকার প্রকাশকের মতে, আমেরিকানরা আনুমানিক ২০৬ বিলিয়ন ডলার খরচা করে ফুলের ওপর, ১.৫৩ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন বিলাসী উপহারের ওপর - যেমন স্পা ট্রিটমেন্ট - এবং আরো 68 মিলিয়ন ডলার গ্রিটিংস কার্ডের ওপর[৪১]।
মাদার'স রিংস বা মায়েদের জন্য আংটির মত প্রচলিত উপহার নিয়ে, মা দিবস, মার্কিন গয়না শিল্পের বার্ষিক রাজস্বের ৭.৮ % রাজস্ব উত্পাদন করবে ২০০৮-এ[৪২]।
ফুল এবং অনান্য বানিজ্যিক শিল্পের লাগাতার প্রচার ও সহায়তা ছাড়া মা দিবস হয়ত আসতে আসতে উঠেই যেত। শিশুদিবস বা টেমপারেন্স সানডে -র মত অন্য প্রটেস্টান্ট ছুটির দিনগুলির এরম একই পর্যায়ের জনপ্রিয়তা নেই[৪৩]।
0 Comments